Tuesday, December 9, 2008

শয়তানের কারখানা


পরীক্ষা শেষ হবার পরের দিন্‌গুলো সবচেয়ে রহস্যময় ঠেকে আমার কাছে। ভালোলাগা আর মন্‌কেমন-এর এরকম মল্লযুদ্ধ আর বিশেষ দেখি না। না... দেখি। দেখি কোন শোকাচ্ছন্ন বাড়িতে। মৃতদেহ-র বেগুনি মুখের ছবি বড়জোর একদিন রাত জাগায়। আবার পরেরদিন সকালে দুধ্‌মুড়ি, লেবুচা। আবার STAR আনন্দ, AAJ TAK। আবার sms, missed call। বরং কিছু উপরি পাওনা ঘটে। Australia-নিবাসী মামা আসে তিন বছর পরে। দিদিভাই দিল্লীতে পড়া শেষ হবার ছমাস আগেই একবার দেখা দিয়ে যায় বাধ্য হয়ে। বড়মাসি রা ভূপাল থেকে ছুটে আসে। খাটে সবার জায়গা হয়না। মেঝেতে মেঝেতে পড়ে তোষক। খেপে-খেপে আসে চানাচুরমুড়ি, ডিমের ওম্‌লেট। এতদিনের জমা যত গল্প, উজাড় করে দিই একে অপরের কাছে। পড়াশুনা বাদ। মা জোর করলেই মেজদিদা বলে ওঠে, "খুকুর যত বাড়াবাড়ি! আমাদের ছেলেমেয়েরা কি পড়াশুনা করেনি নাকি? সব আকাট মুখ্যু?" সমালোচনার ভয় আর কারো থাকুক না থাকুক, মা'র আছে। তাই কেউ মারা গেলে আমার অন্তত পোয়া-বারো। খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডার আড়ালে মৃত মানুষ টা বেশ সহজেই হারিয়ে যায়। অবশ্য খুব অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে অন্য কথা। তখনই আসল দ্বন্দ্ব। হইচই-হুল্লোড়ের মাঝে কোথায় এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকা একাকীত্ব। সমষ্টিগত আড্ডার সঙ্গে একাই লড়ে চলে নিরন্তর। কখনো পারে। কখনো হেরে যায়। আর রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে আমার মন করে তোলে অতিষ্ঠ। ভেবে পাই না কোন্‌দিকের পাল্লায় চাপিয়ে দেব আরেক্‌টা বাট্‌খারা। বিচারক-এর ভূমিকা আমার কাছে বরাবর-ই অস্বস্তিকর।

পরীক্ষার পরের সময়টাও এক্‌টা অদ্ভূত অনিশ্চয়তায় ভরা। একদিকে এতদিনের আশা পুর্ণ হবার উচ্ছ্বাস, আরেকদিকে একটা তলিয়ে দেওয়া শূন্যতা। এতদিন ব্যস্ততার মধ্যে সারাক্ষণ হাঁস্‌ফাঁস্‌ করতে করতে মনে হচ্ছিল পরীক্ষা বুঝি দুহাত দিয়ে জাপ্‌টে ধরেছে সময়ের গতি। আমি আর এগোতে পারছিনা। ঘড়ির কাঁটা টা থম্‌কে গেছে আপাতত। আর যখনই চলছে, এত বোঝা কাঁধে চাপানো যে পা টেনে-টেনে খোঁড়াচ্ছে ক্রমাগত। কিন্তু এখন সে দিন নেই আর। আমি এখন September-এর ঘুড়ির মত মুক্ত, বন্ধন্‌হীন। সময় তাই হয়ে গেছে ঘুড়ির সুতো--- আমায় এগিয়ে নিয়ে চলেছে... দূরে... আর-ও দূরে। সময় পিছলে যাচ্ছে; পিছলে যাচ্ছে লাটাই-এর শরীর থেকে। সব সুতো এক্‌সময় ফুরিয়ে যাবে... আমি উড়ে যাব চিরমুক্তির সন্ধানে।

এইবেলা থামি।
নাহলে মগজখানা সত্যিই শয়তানের কারখানা হয়ে উঠবে।

5 comments:

  1. নিরপেক্ষ থাকা বেশ কঠিন কাজ। তাই বিচারকের ভূমিকাও অস্বস্তিকর। তবুও আমরা যা চাই না, তাই করতে হয়! যা ভাবি তা শেষপর্যন্ত করে উঠতে পারি না! সেই অসহায়তাটা শব্দে প্রকাশ করা একটু দুঃসাধ্য তো বটেই। চেষ্টার জন্য রইল প্রশংসা।

    চিরমুক্তির সন্ধানে উড়বি! লাটাইতে যে সুতোর শেষ প্রান্তটা বাঁধা থাকে। সেটা না ছিঁড়লে...

    ReplyDelete
  2. Welcome to blogosphere, finally! :D
    Kintu ami kichhu porte parchhina, shob shaangketic chinho je! :(

    Though you detest it, please do write the bangla in english alphabets. Pliss?

    - Rushie.

    ReplyDelete
  3. Shunnota bodhoy amaderke shobshomoy dhaoa kore beray. Tai na?

    Shunnotar duti rup besh efficiently ekotrito hoeche.

    Tobe amr mone hoy, tui general shunnotar kotha likhte gie, mrittur bepartar opor ektu beshi focus korechis. Tate jinista khapchara lagche na, kintu kothao ektu ‘exaggeration’ mone hoche hoyto. Jinista jehetu personal, ebong blog, shehetu ‘perfectly splendid’ kintu alada kore lekha hishbe dekhte gele r ektu explanation, mane r ektu boro korar dorkar chilo.

    Ending e last duto line amr pochondo hoyni. Puro bhab ta ke negatively affect korche.

    D style has perfectly blended with the subject…………and I dont think I need to say much about it……………it’s the ‘Sanchari style’ at its best.

    ReplyDelete
  4. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  5. @Nachiketa: dekha jak... :)

    @Zephyr: yeppie!! loooooooooooong last! :D
    ebare injiri horofe likhchhi. eshpecially for u.

    @poushali: analogy ta nitantoi personal. tai exxageration shobdo ta thik... ektu iye lagchhe.
    ending ta thik tor comment tar moto. puro jinis ta last lineguloy negate kora. what a match!! :P

    ReplyDelete